ফিচার

কন্যার সাথে লন্ডন ভ্রমণের একটি দিন

মাস ছয়েক আগে এম্বেসিতে একটি কাজে সাউথ কেন্সিংটন যাবার প্রযোজন পড়ল। একাকী যাবার পরিকল্পনা তাকলেও আমার জ্যৈষ্ঠ কন্যা বার বার বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছিলো মাকে রাজি করিয়ে তাকে যেন সঙ্গে নিয়ে যাই।
মেহেক তার মা ছাড়া আমরা সাথে সাধারণত যখন বেরহয় তখন আমাদের গন্তব্য সর্বোচ্চ নিকটস্থ পার্ক অথবা স্কুল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ । অন্যতায় মাতৃ সঙ্গিনী মেহেকের একাকী সঙ্গ পাওয়া দায়।
গাঢ় হলুদ বর্ণের ওভার কোর্ট আর কাঁদে গুলাপি ব্যাগ -উজ্জ্বল সকাল যেন ঝলমলে হয়ে উঠলো একজন অভিযাত্রীর এই ধরণীর বুকে নতুন করে ছুটে চলার দীপ্ত আখাঙ্কা যা ছিল লোকক্ষণীয় ।
প্রয়োজনের তাগিতে আজ আমি অথবা আমরা যারা বাবা হয়েছি অনেকটা নিঃসঙ্গ ভাবে দৌড়াই জীবনকে সাজাতে সেও হয়তো একদিন ছুটে চলবে। তার সেই ছুটে চলাটা যেন ক্লান্তিহিন হয়, প্রগাঢ় জীবনবোধে সে যেন বিনোদিত হয় এই কামনা করছি ।
ট্রেনে উটে বসেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন ইদানিং সেকেন্ড লেয়ারের কথা বার্তা আয়ত্ত করতে শুরু করেছে। মানে যুক্তি তর্ক।কোনো উত্তর যুক্তিক মনে না হলে আরো কয়েকটি সম্পূরক প্রশ্ন ছুড়েদে।
যাত্রা কালে বেশ নমনীয় এবং কোঅপারেটিভ ছিল মেহেক।সাউথকেন্সিংটন স্টেশন থেকে নামার পর পায়ে হেটে প্রায় ১০ মিনিট পর এম্মেসিটির অবস্থান।বাবা আর মেয়ে মিলে ১০ মিনিট হাটলাম,পথে দেখলাম ঐতিহাসিক রয়েল আলবার্ট হল ,বিশ্ববিখ্যাত ইম্পিরিয়াল কলেজ এবং সাইন্স মিউজিয়াম যেখানে সংরক্ষিত আছে ডাইনোসরের ফসিল।
ডাইনোসরের কঙ্কাল দেখে মেয়েটির চোখ বের হয়ে যাবার উপক্রম।আমাকে বললো এর নাম হচ্ছে Tyrannosaurus. আমি এই ডাইনোসরের নাম এর উচ্চারণ ইচ্ছাকৃত ভাবে বার বার ভুল বলছিলাম তাতে সে মহা বিরক্ত। প্রাণপণে চেষ্টা করছিল আমাকে শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করানো ,পরে হাল ছেড়ে দিয়ে বললো বাসায় গিয়ে শিখিয়ে দিবো, এখন আর না !
এভাবে পৌঁছলাম কাঙ্খিত গন্তব্যে।
এম্বেসি অলারা বললেন তারা কার্ড পেমেন্ট নেননা ক্যাশ দিতে হবে এনং এও বললেন নিকটস্থ ক্যাশ মেশিন ট্রেন স্টেশনের পশে মানে আবারও ১০ মিনিট হাটা।
বাচ্চাটার কষ্ট হচ্ছিলো এতটি পথ হাটতে, তাই ফেরার সময় লন্ডনের অতিহ্যবাহী একটি কালো টেক্সি নিলাম।কালো টেক্সিতে উঠে সে বেশ উচ্ছসিত এবং উৎফুল্ল ।
বাসায় ফেরার সময় এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে কিছু পছন্দের খাবারের সন্ধান করতে লাগলাম । কবিডি- ১৯ এর কারণে তখনও প্রায় সব রেস্তোরাঁ বন্ধ। একটি Takeaway থেকে কিছু খাবার কিনলাম সাথে মেহেকের জন্য অনাখাঙ্কিত চমক নিষিদ্ধ কোমল পানিও কোকাকোলা (বাসায় বাচ্চাদের জন্য নিষিদ্ধ) সেকি আনন্দ আকাশে বাতাসে- সে শুধু দাঁতের সাথে দাঁত লাগিয়ে হাসছিলো-তার এই অবকাশ ভ্রমণের পূর্ণতা যেন নিয়ে আসলো এই কোমল পানিও ।
রাস্তার পাশে একটি বেঞ্চে বসে খাচ্ছিলাম আমরা। কয়েকটি কবুতর কাছে আসলো, খাবার ছিটিয়ে দিচ্ছিলাম ,পরক্ষনেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করলো। মেহেকের মনোযোগ তখন কবুতর গুলোর দিকে।আমাকে বললো তারা সবাই কেন আসছে ? আমি বললাম তারা ক্ষুদার্ত।
মায়াভরা চোখে কবুতর গুলোর দিকে চেয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে আমাকে বার বার বলছিলো মেহেক আব্বু এই বার্ড খাবার পায়নাই ওটারে দাও –তাকিয়ে দেখছিলাম সাত বছরের মেয়েটির দিকে – সেকি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল তখন মেয়েটি ,লক্ষ একটাই , কোনো কবুতর যেন ক্ষুদার্ত ফিরে না যায়।
রোদ সরে যাচ্ছিলো। বেঞ্চ থেকে আমরা উঠে দাঁড়ালাম।ফেরার সময় সাবওয়ে ধরে পশ্চিমমুখি নিকটস্থ ট্রেন স্টেশন কে লক্ষকরে বরাবর হাটছিলাম আমরা। দূরথেকে BILLY JOEL এর বিখ্যাত গান ” মাই লাইফ” এর সুর ভেসে আসছিলো। একজন গিটার হাতে সমগ্র আবেগনিয়ে গাচ্ছিলো গানটি ।
(প্রশ্ন) মেহেক আব্বু এই লোকটি কে? আমি বললাম শিল্পী – মানুষ টাকা দিচ্ছে কেন ? আমি বললাম মানুষ তার গান পছন্দ করছে ,তাই তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এই টাকা দিচ্ছে ।
…এই বার আর আমি বললাম না ,সে ভিক্ষুক গান গাচ্ছে ক্ষুদা নিবারণের জন্য। ….নতুন দিনের এই অভিযাত্রীর প্রয়োজন মানুষ থেকে নিৎসারিত অফুরন্ত আলো…অন্ধকার নয়।
গানের কথাগুলো ভেসে আসছিলো আর আমরা হাটছিলাম। ..মেহেক ঘুরে ঘুরে দেখছিলো একজন সফল মানুষের প্রতিবিম্ব।

Got a call from an old friend we used to be real close
Said he couldn’t go on the American way
Closed the shop, sold a house, bought a ticket to the west coast
Now he gives them a stand-up routine in …

লিখেছেন : আমিমুল আহসান তানিম, সাংবাদিক -টিভি উপস্থাপক ,লন্ডন

এ সম্পর্কিত অন্যান্য সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Close