আমাদের কমিউনিটি

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের মেম্বারশিপ নিয়ে ‘নজিরবিহীন অনিয়মের’ প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলনে ৪ দফা দাবি

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের মেম্বারশিপ নিয়ে এবারে ‘নজিরবিহীন অনিয়মের প্রতিবাদে’ মঙ্গলবার ২৮ ডিসেম্বর লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ক্লাবের যেসব সদস্যের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়নি এবং যে চার জনের সদস্যপদ স্থগিত রাখা হয়েছে, তাঁদের স্থায়ি সদস্যপদ অবিলম্বে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন মোহাম্মদ মকিস মনসুর। সূচনা বক্তব্য রাখেন সৈয়দ সাদেক আহমদ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মোহাম্মদ খায়রুল আলম, তওহীদ আহমদ, সৈয়দ জহরুল হক, ইয়াসমিন সুলতানা পলিন, শাহ সোহেল আহমদ,শামসুর রহমান সুমেল, আমিনুর চৌধুরীসহ অন্যান্য ভুক্তভোগি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “অজ্ঞাত কারণে আমাদের প্রেস ক্লাবের সাধারণ সদস্যপদ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত বিধায় কয়েক জন সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত রাখা হয়েছে, যা তাদের স্থায়ীভাবে বাদ দেয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া বলে অনুমিত। রাজনীতি করা কোন অপরাধ নয়। যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্লাবের সদস্য তাদের নিয়ে ক্লাবে কোন ঝামেলার নজির নেই গত ২৮ বছরের ইতিহাসে। সকল সদস্যই রাজনীতি দূরে রেখে ক্লাবের ঐতিহ্য, ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখেছেন। এই ক্লাবে স্থানীয় রাজনীতি অর্থাৎ লেবার, কনজারভেটিভ বা লিবডেমের সমর্থকরাও সদস্য হিসেবে আছেন। তাঁদের নিয়ে যদি সমস্যা না হয় তবে দেশীয় রাজনীতি নিয়ে সমস্যা কোথায়? এই বৈষম্যমূলক নীতির মাধ্যমে আমরা কেবল দেশীয় রাজনীতি নয়, প্রিয় বাংলাদেশকেও কি অপমান করছি না?”
সম্মেলনে বলা হয়, “যেসব সদস্যের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়নি বা যাঁদের সদস্যপদ স্থগিত রাখা হয়েছে, তাঁদের কেউ কেউ বিগত সময়েও সাংবাদিকতা ও  রাজনীতি করে আসছেন। তাঁরা কোনদিনই ক্লাবের কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি। অথচ তাঁদের বাদ দেয়ার জন্যে ক্লাব নেতৃবৃন্দের তোড়জোড় সন্দেহের উদ্রেক না করে পারে না।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “অন্যদিকে ‘রাজনীতি করার দায়ে’ যে চারজন সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত রেখে নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড় আইন সম্মত নয়। মেম্বারশিপ পেন্ডিং রেখে নির্বাচন আয়োজন কোনভাবেই বিধিসম্মত নয়। কারও সদস্যপদ স্থগিত রেখে সদস্যপদের তালিকাও পূর্ণাঙ্গ হয় না।”
“আমাদের সদস্যপদ বৈষম্যমূলকভাবে এমনকি দায়িত্বশীল কারও কারও ব্যক্তিগত ক্রোধের কারণে কেড়ে নেয়া হয়েছে” বলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকরা দাবি করেন। তারা বলেন, “এমন সদস্যদেরও সদস্যপদ দেয়া হয়নি, যাঁরা ক্লাবের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছেন এবং কেউ কেউ নির্বাহি কমিটিতে সম্পাদকীয় দায়িত্বে থেকে সাফল্যের সাথে কাজ করেছেন।”
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, “কি কারণে সদস্যপদ নবায়ন করা হয়নি, সেটা পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়নি। কাউকে আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেয়া হয়নি। জানতে চাইলে কোন সদুত্তর মেলেনি। বরং, মিলেছে অবজ্ঞা আর অবহেলা। অসৌজন্যমূলকভাবে ক্লাবের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সংশ্লিষ্টদের রিমুভ করা হয়েছে। এই কার্যক্রমগুলো ক্লাবে বিভাজন সৃষ্টির নজিরবিহীন চেষ্টা। এর মাধ্যমে সিকি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ক্লাবে বিরাজমান সুষম ও ভারসাম্যমূলক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে, যা এদেশে মিডিয়া কর্মীদের পেশাগত ঐক্য হুমকিগ্রস্ত করেছে এবং আমাদের কমিউনিটি-কাঠামোর ভিত্তিমূলে আঘাত হেনেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে: যাঁদের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়নি অবিলম্বে তাঁদের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য তালিকায় তাঁদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা; কালবিলম্ব না করে ক্লাবের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংশ্লিষ্ট সকলকে আবারও অন্তর্ভুক্ত করা, পেন্ডিং লিষ্টের সকলের সদস্যপদ নবায়ন করে নতুন সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং এসোসিয়েট মেম্বারপদে যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদেরকে স্থায়ি সদস্য হিসেবে আবারও নতুন সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।

লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বক্তব্য

এদিকে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “ক্লাবের বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর’ তৎপরতায় তারা উদ্বিগ্ন।” সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য তাদের নজরে এসেছে উল্লেখ করে এর আগের দিনের নিবা‍র্হি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়।
প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হোক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুবায়ের ও কোষাধ্যক্ষ আ স ম মাসুমের নামে প্রদত্ত এই বিবৃতিতে ক্লাবের সদস্যপদ প্রদানকে কেন্দ্র করে সংগঠনের ‘গঠনতন্ত্র বিরোধী তৎপরতা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘন থেকে’ বিরত থাকতে নির্বাহী কমিটি পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “আইন অনুযায়ী, ক্লাবের সংবিধান এবং চ্যারিটি কমিশনের নির্দেশনা মেনেই চলছে ক্লাবের কার্যক্রম।”
ক্লাবের এই বিবৃতিতে একাধিক সদস্য কর্তৃক স্বাক্ষর অভিযান ও সলিসিটার নোটিশ দেয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, “দুটি ক্ষেত্রেই কোনো সমাপ্তি না টেনে এখন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ‘আত্মঘাতী কাজে’ লিপ্ত হয়েছেন তারা যা খুবই দু:খজনক।”
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের বিবৃতিতে ‘প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে যুক্তিহীন ও মিথ্যাশ্রিত প্রচারনার’ ক্ষেত্রে একটু ‘সাবধান’ থাকার জন্য এবং ‘সংগঠনটি নিয়ে ভুল কিছু প্রকাশ ও শেয়ারে নিজেদেরকে যুক্ত না করার’ সবাইকে বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত অন্যান্য সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Close